Translate

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

লালপুর মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান রুট: পুলিশ হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা

আকতার হোসেন অপূর্ব, নাটোর প্রতিনিধি

 নাটোরের লালপুরে বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় ও পুলিশের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে। মাদক ব্যাবসার প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত এই লালপুর। সীমান- এলাকা পার্শ্ববর্তী হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, গাঁজা ও হিরোইন লালপুরসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও রাজধানী ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর কিশোরী, যুবক সহ বিভিন্ন পেশার চাকুরীজীবীরা।
উপজেলার পশ্চিমে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা,দক্ষিণে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামাড়া ও দৌলতপুর উপজেলা, পূর্বে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা অবসি’ত। পশ্চিম দক্ষিণ কোনে ভারতের জলঙ্গী বর্ডার অবসি’ত হওয়ায় প্রতিদিন নদী পথে ও সড়ক পথে হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, গাঁজা, হিরোইন আসে এই রুটে। মাদক ব্যাবসার প্রধান রুট হিসেবে সারা দেশে লালপুর উপজেলা পরিচিত। লালপুর থেকে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পাইভেট কার সহ বিভিন্ন যান-বাহনে দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা সহ রাজধানী ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। লালপুর উপজেলার তিলকপুর, কাজীপাড়া, লক্ষীপুর, নুরুল্লাপুর, নবীনগর, দক্ষীণ লালপুর, উত্তর লালপুর, ডেবরপাড়া, দুড়দুড়ীয়া, বিলমাড়ীয়া, মাধবপুর, গৌরীপুর, পালিদেহা, পুরাতন ঈশ্বরদী সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে পুলিশের সহযোগিতায় ফেন্সিডিল গাঁজা হিরোইনের ব্যাবসা জমজমাট ভাবে চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত ২০১০সালের ৮ নভেম্বর তিলকপুর আনসার ও ভিডিপি ক্লাবের উদ্দ্যোগে গৌরীপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ছিদ্দিকুর রহমান ও রাজশাহী র‌্যাব- ৫ এর উপ- অধিনায়ক মেজর আনোয়ার সহ পাবনার  পুলিশ সুপার ( পিপিএম ) জাহাঙ্গীর আলম মাতুব্বর , নাটোর সহকারী পুলিশ সুপার নাসিরুল ইসলাম স’ানীয় পুলিশ প্রসাশন  উপসি’তে   মাদক বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । মাদক বিরোধী সমাবেশের পর তৎকালীন লালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলামকে মাদক ব্যাবসায়ীদের সহোযগিতা করার কারনে শাসি- হিসেবে রাজশাহী পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয় । লালপুর কে মাদক মুক্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মতিয়ার রহমান কে  নিয়োজিত করেন।
তিনি প্রথম দিকে লালপুর থানা মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াসী অভিযান ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদলতে মাদক ব্যাবসায়ীদের ৩-৬ মাসের জেল ও আর্থিক জরিমানা করলে মাদক ব্যবসায়ীরা সাময়িক ব্যবসা বন্ধ রাখে। বর্তমান লালপুর থানায় নামে মাত্র মাদক বিরোধী  অভিযান চালিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের গ্রেফতার করা হলেও প্রকৃত মাদক সম্রাটরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মাদক সম্রাট তিলকপুর গ্রামের মমিন মন্ডলের পুত্র আহাদুল, মৃতঃ মুজি সরদারের পুত্র রফিকুল ওরফে রফিজুল,মৃত আঃ সাত্তারের ২নং- ছেলে আকতার হোসেন, কাজীপাড়া গ্রামের মৃত
সিরাজুল ইসলামের পুত্র আসাদুজ্জামান শিল্পী, লক্ষীপুর গ্রামের আজগর আলী ভাঙ্গনের পুত্র জিয়াউর রহমান জিয়া, নবীনগর গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে ফেন্সি রবি , দক্ষীণ লালপুর গ্রামের খোরশেদ এর পুত্র আজিম,বাকনা গ্রামের জানু শেখের পুত্র ঈদ্রিস আলী , পুরাতন ঈশ্বরদীর (ভাদুর বটতলা) মৃত হাজের আলী পুত্র হাবিবর রহমান, মৃত হারু প্রাঃ পুত্র রাজা সহ অনেকে নামে মাদক মামলা সহ বিভিন্ন প্রকার মামলা থাকা সর্ত্তেও পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদক ব্যাবসায়ীদের নিকট থেকে লালপুর থানা পুলিশ মোটা অংকের মাশুয়ারা হাতিয়ে তাদরকে মাদক ব্যাবসায় উৎসাহ দিচ্ছেন। পুলিেেশর সঙ্গে মাদক ব্যাবসায়ীদের সখ্যতার কারণে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছে।
এলাকাবাসীর মতে থানা পুলিশের অবহেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ফেন্সিডিল, গাঁজা ও হিরোইন ব্যবসা করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর, কিশোরী, যুবক সহ বিভিন্ন পেশার চাকুরী জীবিরা। মাদক সেবনকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। অপর দিকে এলকাবাসীরা বলেন, প্রতিদিন শত শত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার যোগে মাদক সেবনকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজে পড়-য়া ছাত্রীরা। সচেতন মহলের দাবী, পুলিশ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা দোষী পুলিশ সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গোপনে ও প্রকাশে তদন-  করে শাসি-র ব্যবস’া এবং মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস’া গ্রহনের দাবী জানান। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই আপনারা পত্রিকায় আমাদের বিরুদ্ধে লিখলে আমাদেরই লাভ। কারণ পুলিশ আমাদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করলে ছোট খাটো মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। ফলে আমরা মাদক সেবনকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রয় করতে পারি।
এ ব্যপারে লালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মতিয়ার রহমান  বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে নাটোর পুলিশ সুপার কাইয়ুমজ্জামান বলেন,মাদক ব্যবসা সর্ম্পকে আমি জানি।সঠিক তথ্য পেলে প্রয়োজনে আমি নিজে অভিযানে যাব।
বাংলাদেশ পুলিশ রাজশাহী রেঞ্জ এর ডিআইজি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লালপুরে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। কোন পুলিশ সদস্য যদি মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করে থাকে তবে তদন- সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন