Translate

সোমবার, ২ জুলাই, ২০১২

সৌরশক্তিচালিত মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেছে মাগুরার ক্ষুদে বিজ্ঞানী "জুবায়ের"

ট্রাফিক আইন সহায়ক, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নতুন ধরনের মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেছেন মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকার যুবক জুবায়ের হোসেন। জ্বালানি তেলের বদলে তাঁর মোটরসাইকেলটি চলবে সৌরশক্তি ও বাতাসের সাহায্যে। জুবায়ের তাঁর উদ্ভাবিত মোটরসাইকেলের নাম দিয়েছেন ডিজিটাল ইজি সাইকেল। এটি এমন একটি স্বয়ংক্রিয় যৌথ সার্কিটের মাধ্যমে পরিচালিত, যার ফলে মোটরসাইকেলটি একটি বিশেষ ধরনের হেলমেট ছাড়া স্টার্ট নেবে না। যা মোটরসাইকেল চুরি প্রতিরোধ করবে এবং ট্রাফিক আইনের সহায়ক হবে। এটির ডিজাইন করা হয়েছে অনেকটা জাপানি হোন্ডা ফিফটি সিসি মোটরসাইকেলের মতো। তেলে না চলায় মোটরসাইকেলে কোনো ধোঁয়া হয় না। এটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এতে কোনো শব্দ হয় না, যার ফলে এটি পরিবেশবান্ধব।

মোটরসাইকেলটির দুই পায়ে দুটি ব্রেক আছে। এ ছাড়া সাইকেলটিতে বৈদ্যুতিক এক্সেলেটর স্থাপন করা হয়েছে। এটিতে কোনো গিয়ার দেওয়া হয়নি। গোটা সাইকেলে ১২ ভোল্টের তিনটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হয় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন-শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত মোটরটি চলতে, অপরটি ব্যবহৃত হয় হর্ন, বাল্ব, সিগন্যাল দেওয়ার জন্য। সাইকেলের সামনের দিকে হেডলাইট এলাকায় ছোট আকৃতির বৈদ্যুতিক ফ্যানের আকারে তিনটি পাখা আছে। মোটরসাইকেলটি চললে পাখা তিনটি সজোরে ঘুরতে থাকে। যার বাতাস থেকে তৈরি হয় শক্তি। মোটরসাইকেলের প্রতিটি ব্যাটারিই সচল হয় এটির সঙ্গে সংযুক্ত সৌর প্যানেল ও সামনের দিকে থাকা পাখার ঘূর্ণায়মান বাতাস থেকে পাওয়া শক্তি ও জমা হওয়া চার্জ থেকে। সব ব্যাটারির সঙ্গেই সামনের দিকে থাকা পাখা ও সৌর প্যানেলের সংযোগ দেওয়া আছে। মোটরসাইকেলটিতে একটি গিয়ার বক্সের মাধ্যমে বিশেষ ধরনের একটি সার্কিট সংযুক্ত আছে। যার ফলে যখনই মোটরসাইকেলটিতে চলন্ত অবস্থায় ব্রেক করা হয় কিংবা ঝাকি তৈরি হয় তখন ওই সার্কিটের সঙ্গে সংযুক্ত পেনিয়ামে ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ তৈরি হয়, যা তারের মাধ্যমে ব্যাটারিতে চার্জ হিসেবে জমা হয়।

মোটরসাইকেলটিতে কোনো প্রচলিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়নি। এক হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডিসি ভোল্টের মোটরকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই মোটরের সঙ্গে চেইনের মাধ্যমে চাকার সংযোগ আছে। মোটরটি চলে ব্যাটারির শক্তিতে। যেহেতু ট্রাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেলে দুজন চড়া আইনসংগত, সেহেতু জুবায়েরের মোটরসাইকেলটিতে সর্বোচ্চ দুজনই চড়তে পারবে। এজন্য মোটরসাইকেলটিতে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সুইচ যুক্ত করা আছে, যা প্রাপ্তবয়স্ক দুজনের অতিরিক্ত ব্যক্তি চড়লেই ওই সুইচটির মাধ্যমে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া এটি চালানোর জন্যে মোটরসাইকেলের সঙ্গে জুবায়েরের নিজের তৈরি একটি বিশেষ ধরনের হেলমেট নিতে হবে। এ হেলমেটে এমন একটি সার্কিট দেওয়া আছে, যার ফলে হেলমেটটি নিয়ে মোটরসাইকেলে না উঠলে স্টার্ট নেবে না। কোনো কারণে হেলমেটটি অকার্যকর হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে রিমোটের মাধ্যমে এটি স্টার্ট করা যাবে। এ রিমোটটি একইভাবে জুবায়ের তাঁর নিজস্ব কারিগরি মেধায় তৈরি করেছেন।

প্রায় প্রতিদিনই জুবায়েরকে এই মোটরসাইকেলযোগে শহর ও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। তাঁর মোটরসাইকেলটি কোথাও থামলে সব সময় উৎসুক মানুষ এটি ঘিরে ভিড় করে। প্রত্যেকেই তাঁর এ উদ্ভাবনকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
জুবায়ের জানান, ঢাকার একটি ওয়ার্কশপে চাকরি করা অবস্থায় ২০০০ সালে সৌর ও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের মোটরসাইকেল তৈরির পরিকল্পনা তিনি মাথায় নেন। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর গত বছর তিনি এটি তৈরি করতে সক্ষম হন। এটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তবে ব্যাপক উৎপাদনে গেলে এটির খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন। এজন্য তিনি সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আশা করেন। জুবায়ের জানান, তাঁর এ প্রযুক্তি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি এটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে গাড়ির ওজন কমানো, ডিজাইনে নতুনত্ব আনা ও গতি কিছুটা বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। [খবর: কালের কন্ঠের]

জুবায়েরকে আমাদের অভিনন্দন। সেই সাথে সরকার, বুয়েট, প্রগতি, এটলাস বাংলাদেশ, ওয়ালটন, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী সবার কাছে আহবান, ছোট দেখে হেলা করবেন না। এই বিশাল সৃষ্টিকে জনকল্যানে কাজে লাগান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন